কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মসজিদে আগুণ, তবে কী দোষ করেছিলো অভিজিতরা?


কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মসজিদে আগুণ, তবে কী দোষ করেছিলো অভিজিতরা?

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষীপুরের আচু হাওলাদার জামে মসজিদে । কমিটি গঠনের জের ধরে এই আগুন লাগানো হয়েছে বলে দাবি করছে উক্ত মসজিদের ইমাম ও বর্তমানের নির্বাচিত কমিটির সদস্যসহ এলাকার অনেকেই । মসজিদে আগুন দেয়ার পর মসজিদসংলগ্ন ইমামের কক্ষটিতে রাখা ইমামের কাপড় ও অনেকগুলো কোরআন-হাদিসের বই পুড়ে যায় । ভাগ্যিস সে সময় মসজিদ ও ইমামের কক্ষে কেউ ছিলোনা । সোর্স: (http://www.banglamail24.com/news/2015/05/16/id/212818/)

কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মসজিদে আগুণ

মসজিদে আগুণ দিয়েছে দুর্বৃত্তরা । দুর্বৃত্তদের কেউ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নয়, নাস্তিকও নয় । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘুদের সে সাহস নেই । বরং এই মুসলিমরা মানে আমরাই তাদের মন্দির-প্যাগোডা-চার্চ গুড়িয়ে দিয়েছি, আগুণ লাগিয়ে দিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত সেটাই করে চলেছি । একের পর এক হত্যা করে চলেছি নাস্তিকভাবাদর্শী মানুষদের ।

যারা মসজিদের কমিটির পদ গ্রহণ করার জন্য মসজিদে আগুন দিতে পারে, কোরআন-হাদিসের বই পোড়াতে পারে, তারা আদৌ কি সঠিক পথে আছে? একজন নাস্তিক কি কখনো সে কাজ করেছে? শুধু ধর্মীয় অবিশ্বাস ও তাদের মতাদর্শ প্রচারণা-প্রতিষ্ঠার জন্য আজ তারা যত্রতত্র খুন হচ্ছে । অথচ একজন ধর্মে বিশ্বাসী নিজেই নিজেরদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদে আগুন দেয়, কোরআন পোড়ায় তারাই আবার সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় । এসব কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অবমাননা, অসম্মান প্রদর্শণ নয়? শরীয়াহ সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের এখতিয়ারে । শরীয়াহ নিজের হাতে তুলে নিয়ে ইসলামকে সবার সামনে সন্ত্রাসী ধর্ম বানানোটা কি ইসলামের অবমাননা নয়? এরকমভাবে সত্য-সুন্দর-ভারসাম্যপূর্ণ ইসলামকে ফতোয়া, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যমে সবার সামনে হাস্যকর, অযৌক্তিক হিসেবে ইসলামকে উপস্থাপন করা কি আল্লাহ-রাসূল-ইসলামকে গালি দেয়ার চাইতেও নিকৃষ্ট কাজ নয়?
মোদ্দাকথা, ধর্মীয় অবমাননা, আল্লাহ-রাসূল-ইসলামকে গালিগালাজ করলো দুজনেই । কিন্তু শাস্তি পেলো একজন । ব্যাপারটা বেশ ভাবিয়ে তোলায়, জন্ম দেয় হাজারো প্রশ্ন, যে প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে আছে কি?

সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবুন । দেখুন ধর্মকে আমরা কিভাবে উপস্থাপন করছি । নিজেদের স্বার্থের জন্য কী না করতে পারি । অথচ ইসলাম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্যউম্মতের মোহাম্মদীদের দায়িত্বই ছিলো সৎকাজের আদেশ আর অন্যায়কাজে বাঁধা প্রদান করা । (দেখুন সূরা আল ইমরান: ১১২)
আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে ভেবে দেখার বিষয়, যে আল্লাহ এতোবড় দায়িত্ব দিয়ে উম্মতে মোহাম্মদীকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন, সে আল্লাহ নিশ্চয় অমানবিক এমনকিছুর অনুমোদন দিতে পারেন না । ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা, অপরাজনীতি, কলহ-দ্বন্দ্ব, অহেতুক যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, নারীকে গৃহবন্দী-পর্দায় বন্দী, দাসপ্রথা, স্ত্রীর অনিচ্ছাসত্ত্বেও বহুবিবাহ ইত্যাদির অনুমোদন তিনি দিতে পারেন না । তবে এটা সত্য বর্তমানে প্রচলিত ইসলামে এসবকিছুই রয়েছে । মূলত এসব ধীরেধীরে প্রতিষ্ঠার ফল । নবী-রাসূলদের তিরোধানের পরপর সমাজে একশ্রেণি আলেমদের উদয় হয়, যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য ধর্মের ধ্যানধারনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, ধর্মীয় গ্রন্থ নিজেদের সুবিধামত পরিবর্তন-সংযোজনের মাধ্যমে বিকৃত করতে শুরু করে । সেই বিকৃত ইসলামই আজ সারাপৃথিবীতে চলছে । আর মুসলিমরা সেই বিকৃত ইসলাম দিয়ে নিজেরাও শান্তি পাচ্ছেনা, নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষীরা বিকৃত ইসলামের বিকৃতির ফলাফল দেখে আরো ধর্মবিদ্বেষী হতে একরকম বাধ্য হচ্ছে, তাদের বদ্ধমূল ধারণা আরো শক্ত হচ্ছে । পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও ধর্মবিশ্বাস প্রতিনিয়ত সমস্যার সৃষ্টি করছে, সমাধানের পথে কেউ নেই বললেই চলে । নাস্তিককে হত্যা করে কী লাভ? নিজেরাই তো নিজেদের ধর্মের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে !

উপরোক্ত দুশ্রেণির বাইরে গিয়ে শান্তিকামীদেরকে আজ কিছু একটা করতেই হবে । ধর্ম এসেছে মানবতার জন্য, অন্যায়কে ধ্বংস করার জন্য  । আর সেজন্য যুদ্ধ পর্যন্ত করতে হয়েছিলো । সেই হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ধর্মকে মিথ্যার অন্ধকার থেকে বের করে এনেছেন এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী । প্রকৃত সত্য পেতে একবার সত্যসন্ধানী মানসিকতা নিয়ে পড়ুন উনার লেখা বইগুলো । সত্যসন্ধানীদের জন্য এরচেয়ে উত্তম গন্তব্যস্থল আমার জানা নেই । 

লেখক
ইলিয়াস আহমেদ

1 comment: