কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মসজিদে আগুণ, তবে কী দোষ করেছিলো অভিজিতরা?


কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মসজিদে আগুণ, তবে কী দোষ করেছিলো অভিজিতরা?

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষীপুরের আচু হাওলাদার জামে মসজিদে । কমিটি গঠনের জের ধরে এই আগুন লাগানো হয়েছে বলে দাবি করছে উক্ত মসজিদের ইমাম ও বর্তমানের নির্বাচিত কমিটির সদস্যসহ এলাকার অনেকেই । মসজিদে আগুন দেয়ার পর মসজিদসংলগ্ন ইমামের কক্ষটিতে রাখা ইমামের কাপড় ও অনেকগুলো কোরআন-হাদিসের বই পুড়ে যায় । ভাগ্যিস সে সময় মসজিদ ও ইমামের কক্ষে কেউ ছিলোনা । সোর্স: (http://www.banglamail24.com/news/2015/05/16/id/212818/)

কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মসজিদে আগুণ

মসজিদে আগুণ দিয়েছে দুর্বৃত্তরা । দুর্বৃত্তদের কেউ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান নয়, নাস্তিকও নয় । মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে সংখ্যালঘুদের সে সাহস নেই । বরং এই মুসলিমরা মানে আমরাই তাদের মন্দির-প্যাগোডা-চার্চ গুড়িয়ে দিয়েছি, আগুণ লাগিয়ে দিয়েছি এবং প্রতিনিয়ত সেটাই করে চলেছি । একের পর এক হত্যা করে চলেছি নাস্তিকভাবাদর্শী মানুষদের ।

যারা মসজিদের কমিটির পদ গ্রহণ করার জন্য মসজিদে আগুন দিতে পারে, কোরআন-হাদিসের বই পোড়াতে পারে, তারা আদৌ কি সঠিক পথে আছে? একজন নাস্তিক কি কখনো সে কাজ করেছে? শুধু ধর্মীয় অবিশ্বাস ও তাদের মতাদর্শ প্রচারণা-প্রতিষ্ঠার জন্য আজ তারা যত্রতত্র খুন হচ্ছে । অথচ একজন ধর্মে বিশ্বাসী নিজেই নিজেরদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদে আগুন দেয়, কোরআন পোড়ায় তারাই আবার সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় । এসব কি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অবমাননা, অসম্মান প্রদর্শণ নয়? শরীয়াহ সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের এখতিয়ারে । শরীয়াহ নিজের হাতে তুলে নিয়ে ইসলামকে সবার সামনে সন্ত্রাসী ধর্ম বানানোটা কি ইসলামের অবমাননা নয়? এরকমভাবে সত্য-সুন্দর-ভারসাম্যপূর্ণ ইসলামকে ফতোয়া, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যমে সবার সামনে হাস্যকর, অযৌক্তিক হিসেবে ইসলামকে উপস্থাপন করা কি আল্লাহ-রাসূল-ইসলামকে গালি দেয়ার চাইতেও নিকৃষ্ট কাজ নয়?
মোদ্দাকথা, ধর্মীয় অবমাননা, আল্লাহ-রাসূল-ইসলামকে গালিগালাজ করলো দুজনেই । কিন্তু শাস্তি পেলো একজন । ব্যাপারটা বেশ ভাবিয়ে তোলায়, জন্ম দেয় হাজারো প্রশ্ন, যে প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে আছে কি?

সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবুন । দেখুন ধর্মকে আমরা কিভাবে উপস্থাপন করছি । নিজেদের স্বার্থের জন্য কী না করতে পারি । অথচ ইসলাম এসেছে মানবতার কল্যাণের জন্যউম্মতের মোহাম্মদীদের দায়িত্বই ছিলো সৎকাজের আদেশ আর অন্যায়কাজে বাঁধা প্রদান করা । (দেখুন সূরা আল ইমরান: ১১২)
আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে ভেবে দেখার বিষয়, যে আল্লাহ এতোবড় দায়িত্ব দিয়ে উম্মতে মোহাম্মদীকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন, সে আল্লাহ নিশ্চয় অমানবিক এমনকিছুর অনুমোদন দিতে পারেন না । ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা, অপরাজনীতি, কলহ-দ্বন্দ্ব, অহেতুক যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, নারীকে গৃহবন্দী-পর্দায় বন্দী, দাসপ্রথা, স্ত্রীর অনিচ্ছাসত্ত্বেও বহুবিবাহ ইত্যাদির অনুমোদন তিনি দিতে পারেন না । তবে এটা সত্য বর্তমানে প্রচলিত ইসলামে এসবকিছুই রয়েছে । মূলত এসব ধীরেধীরে প্রতিষ্ঠার ফল । নবী-রাসূলদের তিরোধানের পরপর সমাজে একশ্রেণি আলেমদের উদয় হয়, যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য ধর্মের ধ্যানধারনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, ধর্মীয় গ্রন্থ নিজেদের সুবিধামত পরিবর্তন-সংযোজনের মাধ্যমে বিকৃত করতে শুরু করে । সেই বিকৃত ইসলামই আজ সারাপৃথিবীতে চলছে । আর মুসলিমরা সেই বিকৃত ইসলাম দিয়ে নিজেরাও শান্তি পাচ্ছেনা, নাস্তিক ও ধর্মবিদ্বেষীরা বিকৃত ইসলামের বিকৃতির ফলাফল দেখে আরো ধর্মবিদ্বেষী হতে একরকম বাধ্য হচ্ছে, তাদের বদ্ধমূল ধারণা আরো শক্ত হচ্ছে । পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও ধর্মবিশ্বাস প্রতিনিয়ত সমস্যার সৃষ্টি করছে, সমাধানের পথে কেউ নেই বললেই চলে । নাস্তিককে হত্যা করে কী লাভ? নিজেরাই তো নিজেদের ধর্মের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে !

উপরোক্ত দুশ্রেণির বাইরে গিয়ে শান্তিকামীদেরকে আজ কিছু একটা করতেই হবে । ধর্ম এসেছে মানবতার জন্য, অন্যায়কে ধ্বংস করার জন্য  । আর সেজন্য যুদ্ধ পর্যন্ত করতে হয়েছিলো । সেই হারিয়ে যাওয়া প্রকৃত ধর্মকে মিথ্যার অন্ধকার থেকে বের করে এনেছেন এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী । প্রকৃত সত্য পেতে একবার সত্যসন্ধানী মানসিকতা নিয়ে পড়ুন উনার লেখা বইগুলো । সত্যসন্ধানীদের জন্য এরচেয়ে উত্তম গন্তব্যস্থল আমার জানা নেই । 

লেখক
ইলিয়াস আহমেদ

অবৈধ ক্যানভাস


অবৈধ ক্যানভাস


দেখেছো তুমি হিংস্র-শ্বাপদের
খুবলে খাওয়ার দৃশ্য?
ক্ষুরাধার নখ বসিয়ে দিয়েছে-
উহ ! আর্তনাদ কাঁপিয়েছিলো আরশ
আর চেয়ে দেখেছে নির্লজ্জ, কাপুরুষ বিশ্ব ।
দেখতে খুব মজার,
খুবলে খাওয়ার দৃশ্য !
কোথায় কোথায় দিয়েছে কামড়
আর কোন অঙ্গকে রাঙ্গিয়েছে
ধর্ষকশিল্পীর আঁচড়?
ক্যানভাসের প্লট কেমন ছিলো,
কেমন ছিলো রঙ্গের খেলা-
লাল-নীলের মিশ্রণ?
চোখ ফেটে ঝর্ণার প্রবাহ,
আহা, কী রূপের নির্ঘন্ট !
নিতম্বে সবুজ শাড়িটা সিক্ত-
রক্তজবার প্রস্রবণ ।
অসহ্য চিৎকার দিচ্ছে ‍সুড়সুড়ি,
আনন্দ দিচ্ছে বাঁচার আঁকুতি-মিনতি ।
হাত-পায়ের ছোড়াছুঁড়ি দেখে
ধর্ষক নিজেরে ভেবেছে বীর !
আর দর্শক? চোখের ধর্ষণে,
করতালির কর্ষণে
সাহস দিয়েছে যথেষ্ট,
এবার গগন বিদারী আর্তনাদ !
ক্যানভাস নীলে নীলাভ,
জাতি মিলে করছে ধর্ষণ-
হে ধর্ষক, তুমি বীর শ্রেষ্ঠ !

কে জানি বললো, ঢের হয়েছে-
বোধহয় বেঁচে নেই, চল ফুটি !
‘আজ আমাদের ছুটি ও ভাই,
আজ আমাদের ছুটি’ ।
বিনোদনের খোরাক এখন ব্যর্থ;
যে যার মতো চলে গেছে-
রেখে গেছে কিছু চিহ্ন
কেউ পায়ের কেউবা তুলির ।
এটা গাঁজাখুড়ি গল্প,
বিশ্বাস করোনা-
পড়ে রয়েছে নিথর একটা দেহ !

- ইলিয়াস আহমেদ
 ১৬.০৫.২০১৫ খ্রিঃ

ভালোবাসা প্রকাশের লক্ষ্যে দিবস উদযাপন ও আমরা বাঙ্গালি


পৃথিবীতে বোধহয় আমরাই একটা জাতি, যে জাতি  বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে বলতে পারে-
পারিবারিক ভালোবাসা, সুসম্পর্ক ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য স্পেশাল কোনো দিবস বা উপলক্ষ্যের প্রয়োজন নেই ।

ভালোবাসা প্রকাশের লক্ষ্যে দিবস উদযাপন ও আমরা বাঙ্গালি

কারণ বছরের প্রায় প্রতিটা দিনেই সকাল থেকে ঘুমের আগ পর্যন্ত-
এখানকার সন্তানেরা মা-বাবার অকৃত্রিম আদর-স্নেহে থাকে । মায়ের বকুনি, বাবার শাসন, বড় আপুর আদর, ভাইয়ার দুষ্টুমি লেগেই থাকে । মায়ের ঘুম পাড়ানি গান শুনে আমরা ঘুমোতে যাই আবার মায়ের ডাকেই জেগে উঠি সকালে । আমাদের বাবাগুলো অন্যরকম ভালোবাসেন আমাদেরকে । ক্ষেতখামার,ব্যবসা,অফিস থেকে ক্লান্তি হয়ে ফেরার পরেও পরম আদরে আমাদেরকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, আমার মা, আমার বাবা ! হাতে একটা খাবারের প্যাকেট ধরে দিয়ে যখন কপালে-মুখে চুমু দেয় তখন মনে হয়, এরচেয়ে সুখকর কিছু থাকতে পারেনা ।
স্কুল-কলেজের ছুটি পেলেই আমরা দাদা-দাদী, নানা-নানী, মামা-মামীর বাসায় বেড়াতে যাই । মামাতো-খালাতো ভাইবোনগুলোর সাথে আড্ডা, হৈ-হুল্লোড়, দুষ্টুমিতে মেতে থাকি ।দাদা-দাদী, নানা-নানী আমাদের অন্যরকম বন্ধু । খুব মজা করি তাঁদের সাথে  । শেষ বয়সে নাতি-নাতনীদের নিয়ে তাঁরা জীবনের শেষ দিনগুলো বেশ আরাম আর সুখ-স্বচ্ছন্দ্যেই কাটিয়ে দেয় । আমরাই একটা জাতি, যে জাতির সন্তানেরা বড় হয়েও তার মা, বোন, ভাবির কাছে টাকা চাইতে লজ্জাবোধ করিনা ।

আবহমান বাঙ্গালি পরিবারে ভালোবাসা

সম্পর্কের বাঁধনে এভাবেই আটকা পড়ে পারিবারিক শৃঙ্খলায় গড়ে উঠে এখানকার প্রত্যেকটা সুখী পরিবার । ভালোবাসা মিশে থাকে জীবনের পরতে পরতে । আমাদের ভালোবাসা প্রকাশের গল্পগুলো ব্যতিক্রম, অকৃত্রিম । মা-বাবা, পরিবার পরিজনের ভালোবাসা তো সর্বদাই লেগে আছে । কিন্তু মায়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, বাবার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, বড় আপুর প্রতি ছোট ভাই বা বোনোর ভালোবাসা, বড় ভাইয়ের প্রতি ছোট ভাই বা বোনের ভালোবাসাগুলো প্রকাশ পায় গোপনে এবং প্রতিনিয়ত ।

অথচ বর্তমান সভ্যতার অন্যতম ধারক ও বাহক, উন্নতির মানদন্ড নির্ণায়ক জাতিগুলোর মাঝে এই পারিবারিক শৃঙ্খলা, সুসম্পর্কের অবস্থান একেবারেই বিপরীত । লাগামহীন যান্ত্রিক সভ্যতায় তারা এতো পরিমাণ সম্পৃক্ত, যার কারণে তাদের চিন্তা-চেতনা, মনমস্তিষ্কে বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, একমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতিই সার্বিক উন্নয়নের মানদন্ড । সময় তাদের কাছে এতোই বেশি মূল্যবান হয়ে গেছে যে, সন্তানের দেখভাল করার সময়টুকুন পর্যন্ত নেই । অফিস করার আগে ডে-কেয়ারে ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে রেখে সারাদিন অফিস করার পর বাসায় ফেরার পথে সঙ্গে করে নিয়ে আসে । বাসায় এসে এতোটুকুন সময় নষ্ট করতে তারা রাজি নন । কাজের ব্যস্ততায় অনেক মা তার সন্তানকে কেয়ারটেকারের কাছে রেখে আবারও বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন । ফলে সেই শিশুটি বড়ই হয় তার মায়ের ভালোবাসা ছাড়াই । মায়ের বুকের দুধ তারা খুব কমই পায় । মা কী জিনিস, মায়ের ভালোবাসা কেমন সেটা তারা কখনই উপলব্ধি করতে পারেনা ।

পাশ্চাত্যের পরিবার ভাঙ্গন

বাবা সারা দিনরাত ব্যবসা-বাণিজ্য, পার্টি-বার, আড্ডায় ব্যস্ত থাকে । মায়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা । মাসের বেশিরভাগ দিনগুলোতে স্বামী-স্ত্রী একই বিছানায় থাকেনা । তার বদলে রাত কাটায় কথিত গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের সাথে । ভোগবাদী দেহসর্বস্ব এরকম একটা জীবনব্যবস্থায় তারা অভ্যস্ত । সন্তান যখন একটু বড় হয় তখন সে নিজের চোখেই এসব দেখে তাদের কেউ সেই লাইফস্টাইলে অভ্যস্ত হয়ে সেই ঐতিহ্য পরবর্তী প্রজন্মে নিয়ে যায়, অনেকে আবার অভ্যস্ত হতে না পেরে মনের ভিতর চরম ঘৃণা-বিদ্বেষ নিয়ে বড় হয়ে অনেক অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে । জড়বাদী সভ্যতায় প্রতিযোগী মনোভাবে বড় হওয়া পরিবারের ভাইবোনগুলোর মাঝেও তেমন কোনো ভালো সম্পর্ক থাকেনা । উঠতি বয়সে ছেলেমেয়েরা জীবনকে বুঝে নিতে একরকম বাধ্য হয় । পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্যত্র স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করে । মা-বাবার ভালোবাসাহীন এই সন্তানটি যুবক বয়সে নারী-গাড়ি-বাড়ি-পণ্য ভোগ করার মাঝে নিজেকে সর্বদা ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে । তার বিকল্প নেই । কারণ পরিবারের ভালোবাসা কী জিনিস সেটা তার জানা নেই । যেটুকুন সময় সে একা থাকে তাকে একাকীত্ব পেয়ে বসে । সেখানেও নিজের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা । অ্যালকোহলের পানি দিয়ে সেই একাকীত্ব ঘুঁচানোর চেষ্টা  । যখন যৌবন ফুরিয়ে যায়, শক্তি ফুরিয়ে যায় এই মানুষটি শেষ জীবনে চরম দুঃখ-কষ্ট আর একাকীত্বের মাঝে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বেঁচে থাকার চেষ্টা করে । জীবনটা তখন তার কাছে বিরাট প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়ায় । জীবনের অর্থ কী? কিন্তু সর্বোপরি মানুষ হওয়াই মানবিক চাহিদার কারণেই হোক আর অন্য কারণেই হোক, মা-বাবার ভালোবাসার প্রতি দুর্বোধ্য চাহিদা, দুর্নিবার আকর্ষণ কখনই ভুলতে পারেনা । কোনো কিছুই সেই ভালোবাসার ঘাটতি পূরণ করতে পারেনা । তাই জড়বাদী, যান্ত্রিক এই জীবনে অন্তত একটা দিনে মায়ের প্রতি ভালোবাসা, বাবার প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি বাবা-মার ভালোবাসা প্রকাশ করার ব্যাকুল আকাঙ্খা, ইচ্ছাই বিশ্ব মা দিবস, বাবা দিবস, ভ্যালেন্টাইনস দিবসের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম কারণ । যান্ত্রিক ও ব্যস্তময় জীবনে এতোটুকুনই সময় মিলে ভালোবাসা প্রদর্শণের ।

মানুষ হয়েও জীবনের দুরকম গল্প, একই ক্যানভাস হয়েও দুরকম ছবি । এখানেই সবার সাথে আমাদের ফারাক । কারণ আমরা বাঙ্গালি আবহমান থেকেই পরিবারে বিশ্বাসী কিন্তু দেহসর্বস্ব নই । আমরা আনন্দ-বেদনা উপভোগ করি কিন্তু ভোগবাদী নই । আমরা সেক্যুলার কিন্তু আত্মাহীন নই । আমাদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট আছে কিন্তু আমরা জড়বাদী নই । জড়বাদী জাতিগুলো মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য বিশ্ব মা দিবস কিংবা বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য বিশ্ব বাবা দিবস, প্রেমীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য বিশ্ব ভ্যালেন্টাইনস দিবস পালন করে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পন্ন করে কৃত্রিম ভালোবাসা প্রদর্শনের চেষ্টা করে আর আমরা সারাজীবন তাদেরকে ভালোবেসে মনে মনে বলি, ‘মাগো, ও বাবা, আজও তোমাদেরকে ভালোবাসতে পারলাম না । তোমাদের ঋণ কখনোই শোধ করতে পারবোনা ।

তোমরা যখন ঘটা করে মেসেজ-ইমেইল পাঠিয়ে, ভয়েস কল দিয়ে, কার্ড দিয়ে অথবা সরাসরি মায়ের কাছে কিংবা বাবার কাছে গিয়ে বলছো, ভালোবাসি তোমাকে খুব; তখনও আমি বলবো আমি কখনই এটি বলতে পারিনি । বলতেও চাই না । কারণ প্রতিটি ক্ষণই আমার ভালোবাসা মিশে থাকুক আমার মায়ের প্রতি, আমার বাবার প্রতি, স্ত্রীর প্রতি আমার পরিবারের প্রতি । ভালোবাসা প্রদর্শণের জন্য বিশেষ উপলক্ষ্য লাগেনা, দিবস লাগেনা, বিশেষ দিনক্ষণ লাগেনা । আমি এখনও ওদের মতো যান্ত্রিক হয়ে যাই নি যে, মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শণের সময় আমার নেই ।

আমার একদিনের ভালোবাসা প্রদর্শণ যেনো তাঁদেরকে ছোট না করে । আমার মা, আমার বাবা, আমার প্রিয়জনেরা বেঁচে থাকুক সবসময় আমাতে ।

- ইলিয়াস আহমেদ

মুক্তচিন্তার আবরণে মানসিক দাসত্বের জয়ধ্বনি


মুক্তচিন্তার আবরণে মানসিক দাসত্বের জয়ধ্বনি

- মোহাম্মদ আসাদ আলী

মুক্তচিন্তার আবরণে মানসিক দাসত্বের জয়ধ্বনি
কিছুদিন আগেও মানুষের শরীর কেনা-বেচা হতো। গবাদি পশুর মতো জীবন্ত মানুষকে নিয়ে চলত দরকষাকষি। শক্ত-সামর্থ পুরুষ ও রূপবতী নারীর দাম ছিল সর্বোচ্চ; অন্যদিকে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বিক্রী হতো খুবই অল্প মূল্যে। গরু-মহিষ দিয়ে যেভাবে জমিতে হালচাষ করা হয়, পণ্য পরিবহন করানো হয় এদেরকে দিয়ে তার চেয়েও কষ্টসাধ্য কাজ করানো হতো বিনা প্রশ্নে, বিনা শর্তে। এক আদম সন্তানের শরীর নিয়ন্ত্রণ করতো আরেক আদম সন্তান। কিন্তু সেদিন কি আর আছে? আজ যুগের হাওয়া বদলেছে। মানুষের যান্ত্রিক সফলতা আকাশ ছুঁয়েছে। উত্তর মেরু-দক্ষিণ মেরুর রহস্য, তারকারাজি, সূর্য-চন্দ্রের অবস্থান, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও কার্যপ্রণালী, আসমান-জমিনের স্তরবিন্যাস, সমুদ্রের তলদেশের বৃহদাকার প্রাণী, কিংবা সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্মতম কীট-কীটানুকের, জীব-অনুজীবের, উদ্ভিদরাজির প্রতিটি কোষ থেকে অণু পরমাণু- সব আজ মানুষের নখদর্পনে; মানুষের নিয়ন্ত্রণে, মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক পদচারণায় মেতে উঠেছে বিশ্বজগৎ। গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ির জায়গা দখল করেছে বাস, ট্রাক, টেম্পু, রেল। কর্দমাক্ত বা ধূলি-ধূসরিত বন্ধুর রাস্তার দখল নিয়েছে পিচঢালা রাজপথ। কুপের দখল নিয়েছে পাম্প। অন্ধকার খুপড়ি রূপ নিয়েছে বিশাল বিশাল সুরম্য অট্টালিকায়। পত্রবাহী দূতের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে মোবাইল ফোন, টিভি, ইন্টারনেট। আর এভাবেই যুগের পরশে বদলেছে দাসত্বের ধরনও। যুগের চাহিদা অনুসারে শারীরিক দাসত্ব পর্যবসিত হয়েছে মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্বে, যার শিকার পৃথিবীর সাতশ’ কোটি মানুষ।
মুক্তচিন্তার প্রধান ঘাতক: গণমাধ্যম ও শিক্ষাব্যবস্থা
আগের দিনে দাসদের অন্তত এটুকু বোঝার সামর্থ্য ছিল সে আর দশটা মানুষের মতো স্বাভাবিক নয়, সে দাস, মুক্ত হাওয়ায় মুক্ত মানুষের জীবন উপভোগ করতে সে ব্যর্থ। এ ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু বর্তমানের যে সাতশ’ কোটি মানসিক দাসের কথা বলা হচ্ছে তাদের দ্বৈন্যদশা এতই করুণ যে, তারা বুঝতেও পারছে না তারা পরাধীন, দিবারাত্রি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, মিথ্যা হাওয়ায় ফুলিয়ে রাখা হয়েছে তাদের স্বাধীনতার বেলুন। বস্তুত স্বাধীন কর্মের সুযোগ যা একটু আছে, স্বাধীন চিন্তার সুযোগ তাদের একেবারেই নেই। মানবজাতির চিন্তা-চেতনায় পরোক্ষ সীমারেখা টেনে দিয়েছে পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতাপ্রসূত সিস্টেম। মানুষের চিন্তা-ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করার এ নিদর্শন ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই।
মানুষ তার চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান, বুদ্ধি খাটিয়ে যে কোনো সৃষ্টিশীল কাজ করতে পারে। তবে সে জন্য মুক্তবুদ্ধি বা মুক্তচিন্তা অতি প্রয়োজনীয়। কারণ মানুষের সিদ্ধান্ত রচিত হয় চিন্তা থেকে। আবার মুক্তচিন্তার জন্য প্রয়োজন মুক্ততথ্য, এ কথা সকলেই স্বীকার করবেন। সে তথ্যে কারও হস্তক্ষেপ থাকা যাবে না, কারও স্বার্থ জড়িত থাকা যাবে না। কারণ জ্ঞানের সাথে স্বার্থের মিশ্রণ ঘটা মানেই ওই জ্ঞান বিষাক্ত হয়ে যাওয়া। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো- প্রচলিত সিস্টেমে জনসাধারণ যে দু’টি মাধ্যম থেকে সরাসরি তথ্য পায় অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থা ও গণমাধ্যম, এগুলোর সাথে শুধু স্বার্থের মিশ্রণ আছে তাই নয়, পুরোটাই স্বার্থের উপরে প্রতিষ্ঠিত। মানুষকে সত্য ও নিরপেক্ষ তথ্য প্রদান করে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার বদলে এই মাধ্যমগুলো প্রয়াস চালায় জনসাধারণকে প্রভাবিত করে স্বীয় সিদ্ধান্ত সকলের উপর চাপিয়ে দিতে। এর কারণ নির্ণয় করা খুব সহজ। শিক্ষাব্যবস্থা ও গণমাধ্যম উভয়ই নিয়ন্ত্রণ করে শাসকগোষ্ঠী এবং কর্পোরেট ব্যবসায়ী শ্রেণি। কাজেই রাষ্ট্রে শাসকের অপকর্ম ফাঁস হতে পারে বা শাসকের ক্ষতি হতে পারে এমন কোনো তথ্য বা শিক্ষা এ মাধ্যম থেকে আশা করা যায় না। অন্যদিকে পুঁজিবাদী বিশ্বের সরকারগুলো সাধারণত নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজিপতি-শিল্পপতিরা। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড, থার্ড ওয়ার্ল্ড দিয়ে কথা নয়, সকল দেশেরই রাজনীতি ও সরকার পুঁজিপতি বুর্জোয়া শ্রেণি দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমান পৃথিবীর সুপার পাওয়ার খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও নিয়ন্ত্রিত হয় সে দেশের বিলিয়নারদের দ্বারা। এরাই আবার মিডিয়ারও মালিক। কাজেই পুঁজিপতি অনুগত সরকারের নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা ও পুঁজিবাদের হাতের পুতুল মিডিয়া সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে স্বার্থকে আগ্রাধিকার দেবে- সেটাই তো স্বাভাবিক। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, সেই গণমাধ্যমের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষ মানসিকভাবে পুঁজিবাদের দাসত্ব করবে সেটাও খুব অস্বাভাবিক নয়। এখন দেখা যাক শিক্ষাব্যবস্থা ও গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে মুক্তচিন্তার বিকাশ রুদ্ধ করে সাধারণ মানুষকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে দাসত্বে পর্যবসিত করার জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা কী কী কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে।
অর্থনীতিক উন্নয়নের মরিচিকা ও রাজনীতিক সিস্টেমের জাল
প্রথমত, মানবজীবনের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। অর্থনৈতিক উন্নতিকেই মানুষের সার্বিক উন্নয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারাটা সাম্রাজ্যবাদ ও স্বার্থবাদের বড় কৃতিত্ব। কারণ মানুষ যতই অর্থের পেছনে ছুটবে, রুজি-রোজগার নিয়ে পড়ে থাকবে, অর্থনৈতিক উন্নতি নামক মরিচিকার ভ্রমে ডুবে থাকবে ততই সে স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক প্রাণীবিশেষে পরিণত হবে। সমাজ, দেশ ও জাতি নিয়ে তার কোনো ভাবনা থাকবে না। পৃথিবীব্যাপী সাম্রাজ্যবাদীরা যে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে তার প্রাথমিক ফল হলো সম্পদের ভারসাম্যহীনতা, সহস্র জন ক্ষুধার্ত মানুষের বিপরীতে একজন মিলিয়নার। একজন মিলিয়নারের চাহিদা পূরণে প্রাণপণে শ্রমব্যয় করতে হচ্ছে এক সহস্রকে। ভাগ্যচক্রে এক বেলা উপার্জন ব্যাহত হলে আরেকবেলা উপোস করা যাদের অবধারিত, তারা অর্থনীতিক উন্নতিকেই জীবনের লক্ষ্য জ্ঞান করবে না তো কী করবে? ফলে অর্থনীতিক উন্নতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করতে গিয়ে জীবনের অপরাপর বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা নিয়ে ভাবার সময় ও সুযোগ কোনোটাই তাদের নেই। এসব নিয়ে ভাবছে কেবল ওই মিলিয়নার এবং বিলিয়নাররা যারা ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের মনিবের আসনে আসীন। এদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া সাধারণ মানুষকে যা ভাবাতে চায় মানুষ তা-ই ভাবে, যা বিশ্বাস করাতে চায় মানুষ তা-ই বিশ্বাস করে।
দ্বিতীয়ত, অথর্নীতিকভাবে সাম্রাজ্যবাদী শোষক শ্রেণির পাতানো শৃঙ্খল ভেঙ্গে যদি কিছু মানুষ বের হয়েও পড়ে এবং অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও অমানবিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়, সেই সোচ্চার হবার পথেও ফাঁদ পেতে রেখেছে সাম্রাজ্যবাদীরা। র‌্যালি, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, অনশন, প্রতিকী অনশন, মিছিল, মৌন মিছিল, ঘেরাও, স্বারকলিপি প্রদান ইত্যাদি হাজারো চিত্তাকর্ষক প্রতিবাদের প্রক্রিয়া তৈরি করে রাখা হয়েছে। এটা করা হয়েছে যেন মানুষের ক্ষোভ উথলে না পড়ে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সুযোগ পেয়ে রাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে, আখেরে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জন্য হুমকি হিসেবে আবির্ভূত না হয়, শোষক-নিপীড়ক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষিত হয়।
বিষাক্ত ফল প্রদায়ক বৃক্ষের শাখা-প্রশাখা কেটে লাভ নেই, বিষফল থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সমুলে উৎপাটন, এ কথা কে না জানে? একইভাবে যে সিস্টেম এত অন্যায়, অবিচার, অশান্তির জন্ম দিচ্ছে তাকে টিকিয়ে রেখে শুধু গুটিকয় অন্যায়ের প্রতিবাদ করা সমীচীন নয়, প্রয়োজন পুরো সিস্টেমের পরিবর্তন। কিন্তু এ সত্য বোঝার মতো মানসিক অবস্থা কয়জনের আছে?
রেলগাড়ি উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম যে দিকেই যাক রেললাইনের উপর দিয়েই যেতে হয়, লাইনের বাইরে গিয়ে চলতে পারে না। একইভাবে আপনি যতই স্বাধীনতার কথা বলুন, মুক্তির কথা বলুন, মুক্তচিন্তা বা মুক্তমনের ধুয়া তুলুন, সেসব কথার কথা। বাস্তবে আপনার জীবন নামক রেলগাড়িটি চালিত হচ্ছে সিস্টেম নামক রেললাইনের নির্দিষ্ট রাস্তা ধরে, নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আসলে আপনি কিছুই করছেন না, আপনাকে দিয়ে করানো হচ্ছে। আপনার মস্তিষ্ক, আপনার চিন্তা-ভাবনা, আপনার সিদ্ধান্ত- সবই সাম্রাজ্যবাদের কষা ছকের অন্তর্ভূক্ত। আপনি বাস্তবায়ন করছেন মাত্র।

সোর্স: (https://www.amarblog.com/asadali/posts/185604#sq-new)

মা আমার মা


মা, তোমার মনে আছে আমায় কোলে বসিয়ে ঐ তারার দেশের গল্প শোনাতে?
একটি একটি তারা দেখিয়ে আমায় বলতে ঐ তারাটি আমার দাদী, ঐ তারাটি আমার মামা।
মা আমার মা
মনে আছে মা, চাঁদের ঐ টিপটি এনে পড়াতে আমার কপালে? আজ তুমি নেই আমার কাছে। বড় শূণ্য আমার সুখের ভূবন। বড় অসহায় মনে হয় নিজেকে। সবাই আছে, সব কিছু আছে, নেই শুধু মমতা মাখা আমার জগৎ জননী মায়ের হাসি ভরা মুখটা। জানো মা, কেউ আর আমাকে গল্প শোনায় না অচিন দেশের রাজকন্যার। কেউ আর বলেনা "আমার খোকনই পৃথিবীর সেরা রাজপুত্তুর"। কেউ কাছে ডেকে বলেনা "আমার খোকন সোনার মুখটি কেমন শুকিয়ে গেছে"। আচ্ছা 'মা, তুমিও কি ঐ তারার দেশে চলে গেছ, যেখান থেকে আর কেউ ফেরে না কোনদিন? কেউ দেখিয়ে দেয়না কোন তারাটি তুমি। মাগো, তুমি কি আকাশের উপর থেকে আমায় দেখ, আমার খবর রাখ? আমি সারাটি রাত ঐ আকাশ পানে তাকিয়ে থাকি তোমাকে দেখবো বলে, অপেক্ষায় থাকি কখন তুমি নেমে এসে হাত রাখবে আমার মাথায়। আজ তোমায় বড্ড বেশি মিস করছি মা। মনে পরে সেই স্মৃতিময় আদর মাখা দিনগুলোর কথা ; যখন আমার ঘরে ফিরতে একটু দেরী হলেই তোমার অস্থিরতা বেড়ে যেত, রাজ্যের দুশ্চিন্তা নিয়ে পায়চারী করতে ঘর থেকে উঠোন, উঠোন থেকে রাস্তা। পাশের বাড়ির যে বিটলুর সাথে আমার ঝগড়া তার কাছেই তুমি ছুটে যেতে আমায় খুঁজে আনতে তোমার জন্যই মা, বিটলুর সাথে আমার ঝগড়াটা চিরস্থায়ী হলোনা। আজ বিটলু, আমার বন্ধু হয়েই আছে, শুধু তুমি নেই , নেই আর কেউ আমার জন্য রাত জেগে না খেয়ে অপেক্ষা করার। কেউ নেই তোমার দুষ্টু খোকার জন্য দুশ্চিন্তা করার মতো; বকাঝকা দেয়ার মতো। মাগো, জানো তুমি; এখন আর আমি অলসভাবে দেরী করে ঘুম থেকে উঠি না! তোমার শেখানো বিজয়ের গান গেয়ে জীবন সংগ্রামের দায়ভার নিয়ে কর্মের আহ্বানে আমিও সকাল না হতেই বিছানা ছেড়ে দৌড়োই ঘাম ঝরানোর জন্য ময়দানে। কিন্তু ঘুম জড়ানো চোখে তোমার মতো আর কারও কোলে মাথা রেখে আরেকটু ঘুমানোর বায়না ধরতে পারিনা। আজ তোমায় খুব মিস করি মা, খুব। তুমি কোথায় আছো বল না; আমিও আসবো সেখানে। রাখবো মাথা তোমার কোলে। তোমার আঁচলে মুখ ঢেকে ভুলে যাব গ্লানি ভরা জীবনের কষ্টের গানগুলো। তোমার মুখের স্মিত হাসিতে ভরাব আমার শূণ্য বুক। মাগো আমি আর তো সইতে পারিনা। সইতে পারিনা তোমাকে না দেখার কষ্ট। লক্ষ্মী মা, আমার তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো? বিশ্বাস করো, আমি আর দুষ্টুমি করবো না। মা, মাগো একবার এসো আমার কাছে। তোমার খোকন আর তোমাকে জ্বালাতন করবে না। শুধু তোমার বুকে মাথা গুঁজে হাজার ক্লান্তি ভুলে দেব এক লম্বা শান্তির ঘুম।
মা, মাগো আমার,
আমার সোনা মা,
একবার কোলে তুলে নাও
তোমার অলস দুষ্টু রাজপুত্তুরকে ।


লেখক
- শ্রী চন্ডীদাশ আচার্য্য
---------৩০.০৪.২০১৫-----------------

Mobile -01818-022367

হচ্ছে হোক, হতে দাও দূর হোক এই মনোভাব.


হচ্ছে হোক হতে দাও, দূর হোক এই মনোভাব
যে জাতি জলজ্যান্ত অন্যায়কে অস্বীকার করতে শিখে গেছে সেই জাতি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে কী করে? আর রাষ্ট্র পরিচালনা? শিক্ষার্জনের জন্য শিয়ালের কাছে কুমির ছানা দেয়ার মতো । তাইতো দেখে আসছে সবাই । সবার চোখে তা দৃশ্যমান হলে কী হবে? বোধোদয় সেই চায়ের কাঁপে ফুঁক অথবা ফেসবুকে তোলপাড়, বড়োজোর কয়েকটা প্ল্যাকার্ড-ব্যানার নিয়ে টিএসসির সামনে আন্দোলন পর্যন্ত । যদিও আন্দোলনকারীদের তুলনায় মিডিয়ার ক্যামেরার সংখ্যাটাই বেশি । কেনোনা এটা ব্রিটিশদের কর্তৃক পরীক্ষিত, জাতিগতভাবে আমরা এতোটাই নিমকহারাম আর বুর্জোয়া প্রকৃতির যে নিজের আখের গোছানোর জন্য সমগ্র স্বাধীন বাংলাকে একরকম জোর করেই ব্রিটিশদের বিলেতি পকেটে ঢুকিয়ে দিকে কুন্ঠাবোধ করিনা । আর সে কারণেই আজকের এই আধুনিকোত্তর যুগে গণতন্ত্র কিংবা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারীদের কাছে সাধারণ মানবসেবার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের দলীয় স্লোগান বা ব্যানার মিডিয়ার বদৌলতে জনসম্মুখে প্রদর্শণ করার । আমরা আজ কতটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছি সেই চিন্তায় হয়তো একাত্তর কিংবা বায়ান্নের শহীদেরা হতভম্ব ।

ভাবার কোনো ফুরসুরতই নেই, আজ যে নারীটির ক্ষতি হয়েছে সেই নারীটিই আমার মা, আমার বোন, আমার স্ত্রী; আজ যে ভাইটি গুম, খুনের শিকার, সেই ভাইটিই আমার বাবা, আমার ভাই । নির্বোধ জাতিটির কানে ঢুকিয়ে দিলেও পরের দিন স্কুল-কলেজগামী ছাত্রী কিংবা শিক্ষিকার সাথে এমন আচরণ করবে, সেই কথা অবলা নারী কারো কাছে প্রকাশ করতে পারেনা, অভিযোগ? সে তো বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা আর অপেক্ষায় কাঠখড় পোড়ানোর বিষয় ।

মানুষকে মেরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবেন ভালো কথা । আগে নিজেকে, নিজের মা-বাবা-ভাই-বোন আত্মীয়স্বজনকে পুড়িয়ে মেরে তা মিডিয়াতে প্রকাশ করেন । এতে করে আপনার ও আপনার পরিবারের আত্মত্যাগের কথা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । হয়তো এই কোরবানি নবী ইবরাহিম আঃ ও ইসমাঈল সাঃ এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে । অন্যকে মেরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার সার্থকতা নেই, তা গৌরবের বিষয়ও না । আমার কথা শুনে রাগ উঠলেও কিছু করার নেই ।

বুদ্ধিজীবি নামক দেশের অভিভাবকদের চালচলন আর কথাবার্তা দেখলে মনে হয় তাদেরকে ভাড়া করে আনায় হয়েছে হুহু করে কান্না করার জন্য, আলগা চেতনা দেখার জন্য, পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতাগুলো দখল করার জন্য । এই অপ্রতিদ্বন্দ্বী লোকগুলো লেবাসধারী ধূর্তবাজ ধর্মীয় নেতার চাইতে কম নয় । গায়ে দামি খদ্দের একটা চাঁদর, পাঞ্জাবী, সজারুর কাঁটার মতো গোঁফ, সাদা ঝাঁকড়া চুল আর নামের আগে পিছে কয়েকটা টাইটেল নিয়ে চেতনার পসরা নিয়ে বসে আছে । সাদ্দুসাই-ফরিশি-মাওলানা-পুরোহিতরা যেমন পুঁজি হিসেবে ধর্মের কেত্তন গেয়ে বেড়ায়, তেমনি এই ধূর্তবাজ বুদ্ধিজীবিগুলো শান্তির ফেরিওয়ালা হয়ে গণতন্ত্র ও চেতনার হরেক রকম পসরা বিক্রি করে বিশ্বস্ত ও অবিশ্বস্ত ক্রেতার নিকট । ফলে কী হচ্ছে? প্রজন্মের একটা অংশের কাছে সায়েন্স ফিকশন বই হাত ধরিয়ে দিয়ে লাভের যা হচ্ছে তা হলো-দেশের সন্তান বিদেশে গিয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-বিজ্ঞানী যা হওয়ার হচ্ছে-দেশে ফিরে মানবসেবা করছে কয়জন? প্রজন্মের আরেকটা অংশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমগ্র গিলিয়ে দিয়েও লাভের যা হচ্ছে তা হলো-মারামারি, হানাহানি আর দলীয় বিদ্বেষে ভরপুর রাজনীতি-ঐক্যবদ্ধ বাঙ্গালি গড়ার পরিবর্তে জাতীয় বিভাজনে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশ । বলছিনা সায়েন্স ফিকশন বই পড়া বা মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবুলি বুকে ধারণ করা খারাপ, বরং যথেষ্ট ভালো এবং রাষ্ট্রীয় কল্যাণের অন্যতম প্রগতিশীল দিক । কিন্তু সমস্যাটা অন্যখানে । এক বুদ্ধিজীবি শ্রেণি, এক শিক্ষকসমাজ একটা প্রজন্মকে এটা বোঝায় যে, বিজ্ঞানই জীবন কিংবা প্রোগ্রামিং-ই জীবন, আরেক শিক্ষকসমাজ ‍বোঝায় ধর্মই জীবন, আরেক শিক্ষকসমাজ বলে রসায়নই জীবন কিংবা ডাক্তারই জীবন, আরেক বুদ্ধিমহল বলে রাজনীতিই জীবন কিংবা প্রশাসনই জীবন, আর আমাদের মনমস্তিষ্কে তো বদ্ধমূল হয়েই আছে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলই জীবন- জীবনের অন্যদিকগুলো জীবনই না, জীবনের অংশ হলেও ততোটা গুরুত্বপূর্ণ না । এতে করে একটা প্রজন্ম একটি নির্দিষ্ট বিষয়েই সারাজীবন বুঁদ হয়ে থাকছে । জীবনে যে আরো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থাকতে পারে সেটা চিন্তায় করতে পারেনা । অথচ আমাদের এই যান্ত্রিক, আত্মাহীন, প্রগতিহীন জীবন স্থবির ছাড়া কিছুই নয় । যন্ত্র সভ্যতা আনেনি, সভ্যতা এনেছে মানুষ । আর মানুষ যখন যন্ত্র হয়ে যাবে তার দ্বারা পরিবর্তন সম্ভব না । যেমনটি পরিবর্তন হচ্ছেনা আমাদের প্রচলিত দুর্নীতি, সহিংস-বিদ্বেষমূলক মানুষ মারার রাজনীতি, অন্যায়-অপকর্ম, জুলুম-নির্যাতনমূলক সমাজব্যবস্থা থেকে শান্তির কোনো জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার ।

মানুষগুলো আজ একেকটা যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে । স্থায়ী কোনো প্রভাবই ফেলছেনা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো । এই দেখুন না- দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো যখন রাজনীতির উপহার পেট্রোলবোমায় ঝলসে যাচ্ছে, বার্ণ ইউনিটে দগ্ধ মানুষ ও তাদের আত্মীয়স্বজনগুলো আহাজারি করছে, কাঁদছে তখন সারাবাংলাদেশ কাঁদলো, আমরাও কাঁদলাম । আবার যখন ক্রিকেটীয় উন্মাদনায় সারাবাংলাদেশ আনন্দ করছে তখন আমরাও আনন্দ করছি । ঠিক এসময়টাতে আমরা ভুলে গিয়েছি ঝলসে যাওয়া মানুষগুলোর কথা, যারা রাজনীতির বলি হয়ে সংসার-পরিজনকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে গেছে । এককথায় আমরা রোবটের মতো নির্দিষ্ট যান্ত্রিক ইন্দ্রিয়াধীন হয়ে গিয়েছি । কাঁদতে হয় কাঁদি, হাসতে হয় হাসি, নাচতে হয় নাচি । কিন্তু স্থায়ী কোনো প্রভাবই ফেলেনা আমাদের চিন্তাচেতনায়-বিবেকে । ফলে প্রোগ্রামিং-এর লুপিং-এর মতো বারবার সমস্যাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে, সমাধান আর হচ্ছেনা । বাংলা নববর্ষে যে ঘৃণ্য ঘটনাটি ঘটে গেলো এটা নিয়ে লাফালাফি করেও কোনো লাভ নেই, দেখা যাবে কিছুদিন পর নতুন কোনো ঘটনায় এটা কালের স্রোতে ভেসে গেছে কিংবা আরেকটা লোমহর্ষক ঘটনায় এটা চাপা পড়ে গিয়েছে ।

‘হচ্ছে- হোক- হতে দাও’ এই মনোভাব একদিনেই গড়ে উঠেনি । ধীরে ধীরে অগ্রজ প্রজন্মের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আর আত্মকেন্দ্রিকতাই উপহার দিয়ে গেছে এমন একটা প্রজন্ম, যারা মনে করে আমি এম,বি,এ পাস করে ভালো একটা কোম্পানির ম্যানেজার হতে পারলেই দেশের উন্নতি হলো আর দুর্নীতি? সেটা দুদকের দেখার বিষয় । এরকম প্রতিটা পেশাজীবীরই মনোভাব । অথচ ক্ষতির বেলায় সবাই ক্ষতিগ্রস্থ । আজ অন্যের বোনকে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি করছেন আপনি, আগামীকাল আপনার বোন, আপনার মা, আপনার স্ত্রী, আপনার মেয়ে সেই পরিস্থিতির শিকার হবেনা তার কি নিশ্চয়তা? আপনি সেই অপকর্ম করলেও হবে না করলেও হবে । হাতগুটিয়ে বসে থাকাটাই হবে আপনার আমার অন্যায় । আর পেশাদার ধূর্তবাজ বুদ্ধিজীবির উপর নির্ভরতা নয়, নির্ভরতা নয় কোনো রাজনৈতিক দলের উপর, আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে । যে যেখানে আছি সেখান থেকেই শুরু করি অন্যায়ের প্রতিবাদ । ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দল-মত নির্বিশেষে শুধু শান্তির লক্ষ্যে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই । আমাদের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য-বৈষম্যগুলো বাদ দিয়ে আসুন আমরা এক হই পরবর্তী সুন্দর একটা প্রজন্ম গড়ার, যে প্রজন্ম মহাকাশ নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি চিন্তা করবে দেশের, দেশের পাড়া-মহল্লা, আপামর মানুষের, চিন্তা করবে আত্মিক উন্নতির ।

দেশ কারো একার নয়, চেতনা কারো উত্তরাধিকার নয়, মুক্তিযুদ্ধ কারো ব্যক্তিগত অর্জন নয়, ধর্ম-প্রগতি কোনো গোত্র বা দলের পৈত্রিক সম্পত্তি নয়, আমরা প্রত্যেকে সেই সম-দাবিদার, আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে সেই সমাধিকার । আমাদের দেশকে নিয়ে আমাদেরকেই ভাবতে হবে ।

অব্যক্ত কথা


জানিস, সবাই কেমন জানি বদলে যাচ্ছে !
একসময় সবাইকে বিশ্বাস করতাম । যখন থেকে গোমর ফাঁস হয়ে যেতে থাকলো, বিশ্বাসের সুঁতোর মালা থেকে একটা একটা করে পুঁথি ছিঁড়তে শুরু করলো । আজকাল মানুষকে বিশ্বাস করতে খুব ভয় লাগে । আচ্ছা, মানুষের মনের ভিতরে ঢুকে গিয়ে সব দেখে ফেলাটা কি অসাধারণ কিছু? তবে আমি পারি কেনো? সেদিন খুব বিশ্বাসী একটা বন্ধুর অন্তর্নিহিত দৃশ্যটা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম ।

বিশ্বাসী মানুষের তালিকা দিনে দিনে খুব ছোট হয়ে আসছে । জানিনা, কখন যে সেই তালিকায় শূণ্যতা দেখা দেবে । এখন প্রায় মনে হয়, বিশ্বাসটা যুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে, আগে কাউকে বিশ্বাস করতাম ভালোবেসে, আর এখন---- ।

আচ্ছা, বলতো- মানুষ কেনো এতো প্রতিশোধপরায়ণতা
আর হিংসুটে হয়? ও হ্যা, আরেকটা জিনিস আছে- নিজেকে প্রদর্শণকরার আদিম ইচ্ছা ।

আত্ম-প্রদর্শণের এই প্রতিযোগিতায় আমার মতো প্রতিবন্ধীরা কতটা অসহায়, তাই না?

জানিস রে মৃত্যু, দিনেদিনে আমি না খুব একা হয়ে যাচ্ছি । বলতো- মানুষগুলো পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে নাকি আমি নিজেই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছি?

মনে আছে তোর সেদিনের কথা । তোর থেকে দূরে থাকার জন্যই আমার জন্ম হলো । ভেবেছিলাম তুই খুব খারাপ মনের আর তোকে মোটেই বিশ্বাস করা যায় না । কিন্তু জীবন পেয়ে দেখলাম- আমার ধারণার পুরোটাই ভুল । তুই সত্যিই অনেক ভালো । জীবনের অবসাদ দূর করে শান্তি দিতে পারিস । অন্ধকার রাতে যখন কেউ থাকেনা কথা বলার, তখন তোকেই দেখতে পায় । তুই সেই চিরচেনা বন্ধু ।

মাথাটা খুব ব্যাথা করছে । হাত -পা নড়াতে পারছিনা । ডাক্তার বলেছিলো- আমার রোগটা দিনেদিনে বাড়ছে । আব্বু-আম্মু অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে । লাভ হয় নি । হবে কী করে ! আমি তো মন থেকে চাই নি সুস্থ হতে । মন থেকে কারো ভালোবাসা না পেলে, জোর করে পেয়ে কী লাভ ! জানি, মিতু আর পাভেলরা আজকে যদিও আমার সাথে খেলতে চাইছেনা, আড্ডা দিতে চাইছেনা কিন্তু আমি নিশ্চিত- আমি সুস্থ হয়ে গেলেই তারা আমাকে খেলায় নিবে ।

আমি কত স্বপ্ন দেখতাম সবাইকে নিয়ে । কিন্তু যাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম তারাইতো আমাকে...
যাক গে সেসব কথা । মৃত্যু বন্ধু, তোর কি কোনো বন্ধু আছে যে তোকে খুব মিস করে; তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে?
এই দেখো বোকাছেলের কান্ডটা ! কাঁদছিস কেনো? তুই কাঁদলে মানুষগুলো হাসবে ।আমাকে একটা গল্প শুনিয়ে ঘুমিয়ে দেনা । মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, ভালো লাগছেনা ।

[গল্পটা আমাকে স্বপ্নে কেউ বলেছিলো । এরপর থেকেই ভাবছি- অসুস্থ কে? বিশ্বাস হারানো মানুষটি নাকি আমরা মানুষের মুখোশ পড়া দোপায়ে হিংস্র প্রাণীগুলো?]